আমাদের দেশের মত জমিদারের সংখ্যা, মনে হয় পৃথিবীতে কোথাও নাই। পরিবারের প্রত্যেকে একটা করে গাড়ী নিয়ে শহরে ঘুরছি (আগেকার দিনে জমিদার পরিবারের সদস্যরা একেকজন একটা ঘোড়া নিয়ে ঘুরতো) —মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী

531

বেশির ভাগ সময় দাউদকান্দিতে থাকি। আজ, অনেক দিন পর, ঢাকা শহরে বের হই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশেষ অতিথিদের জন্য “সেভেনহিল রেস্টুরেন্ট” এর খাবার পরিবেশনের জন্য। কিন্তু ঢাকার সড়কে নেমে যানজেটের যে পরিস্থিতি দেখলাম- তা খুবই বিব্রতকর। ১০ মিনিটের পথ যদি ২ ঘণ্টায়ও পৌছানো না যায় তাহলে প্রতিদিনকার কাজ ব্যহত হবে মারাত্মকভাবে। ঢাকার যানজটে পড়ে আজ এতটাই বিরক্ত যে মাফ চাইছি “যানজটের” কাছে। আমার “দাউদকান্দি” তে অনেক ভাল, কেনো যানজট নেই সেখানে।

২০২১ সালের মধ্যে অন্যান্য উন্নত দেশের মত  ঢাকার যানজট নিয়্ন্ত্রণে  সরকারের কাছে আমার প্রস্তাব :

১. ঢাকার প্রবেশ মুখে, শহরের রাস্তা ব্যবহারের জন্য উচ্চহারে সিটি টোল নেয়া উচিত।

২. এখনও আমাদের দেশের মত জমিদারের সংখ্যা, মনে হয় পৃথিবীতে কোথাও নাই। পরিবারের এক এক জন এক একটা গাড়ী নিয়ে শহরে ঘুরছি (আগেকার দিনে জমিদার পরিবারের সদস্যরা একেকজন একটা ঘোড়া নিয়ে ঘুরতো)। উন্নত অনেক শহরে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহার কমানোর লক্ষে পিক আওয়ারে ৩/৪ জনের কমে যাত্রী বহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

৩. উন্নত অনেক শহরে ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহারকারীকে অবশ্যই যে কোন পথচারী যদি লিফ্ট চায়, পথচারীকে লিফ্ট দিতে বাধ্য।

৪. ব্যক্তিগত গাড়ীর দাম বৃদ্ধি করতে হবে।

৫. পোশাক শ্রমিকদের মত ব্যক্তিগত গাড়ীর চালকদের বেতন সর্বনিন্ম ১০০০০ টাকা এবং তিনটি বোনাস দেয়া উচিত।

৬. স্কুলের বাচ্চাদের আনা-নেয়ার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহার করা যাবে না। উন্নত বিশ্বের মত প্রতি স্কুলের নিজস্ব বাস/পরিবহন থাকতে হবে।

৭. অতিশীঘ্রই শেখ হাসিনা সরকারের “মেট্রোরেল” প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।

৮. যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং রোধে, নির্দিষ্ট পার্কিং স্থানে “প্রিপেইড টোল পার্কিং মেশিন” বসাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে গাড়ী পার্ক করতে হবে। অবশ্য বুধবার রাজধানীর রাস্তায় গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।

৯. অবৈধ গাড়ি পার্কিং রোধে, উচ্চহারে জরিমানা ধার্য করতে হবে। নিউইয়র্ক শহরের সর্বোচ্চ আয় হয়, “অবৈধ গাড়ি পার্কিং”এর জরিমানা থেকে।

১০. ঢাকা শহরের রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে “পাবলিক পরিবহনের” ব্যবস্হা করতে হবে।

১১. ঢাকা শহরের “পাবলিক পরিবহনের” সকল গাড়ী চালককে “মাধ্যমিক পাস” হতে হবে এবং সকলকে ইউনিফর্ম পরতে হবে।

১২. ঢাকা শহর থেকে সকল “ রিকশা ” প্রত্যাহার করে, শহরের বাহিরে পাঠিয়ে দিতে হবে।

১৩. ঢাকা শহরের সকল “ফুটপাত” অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে হবে।

১৪. শহরের ভিতরের জনসাধারণকে “সাইকেল” চালাতে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে।

১৫. সকল বাস/ট্রাক টার্মিনাল, শহরের বাহিরে নিয়ে যেতে হবে।

১৬. ট্রাফিক পুলিশকে আরো আধুনিক/যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে “সরকারি জরিমানার” অংশ থেকে ট্রাফিক পুলিশকে ব্যক্তিগত উৎসাহ স্বরুপ “অর্থনৈতিক উপহার” দেয়া যেতে পারে।

১৭. অতিশীঘ্রই শেখ হাসিনা সরকারের “এমআরটি” প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।

১৮. সম্ভবত ঢাকা শহরে ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণে কারো “ ড্রাইভিং লাইসেন্স” বাতিল হয় নাই। উন্নত বিশ্বে “পয়েন্ট” পদ্ধতিতে “ড্রাইভিং লাইসেন্স” সতর্কিকরণের মাধ্যমে “বাতিল” করে দেয়া হয়।

১৯. “পাবলিক পরিবহন” ব্যতিত অন্য কোন ব্যক্তিগত গাড়ীতে “সিএনজি” ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।

২০. শহরের জীবনযাত্রার ব্যয়, শহরের বাহির থেকে (গাজীপুর/সাভার/কেরানীগঞ্জ/নারায়নগঞ্জ) বৃদ্ধি করে দিতে হবে। যাতে জনসাধারণ  শহরে থাকতে নিরুৎসাহিত হয়।

২১. শহরের ভিতর জনসাধারণকে “সাইকেল” চালাতে এবং হাঁটার উদ্ভুদ্ধ করতে হবে।

২২. সকল বাস/ট্রাক টার্মিনাল, শহরের বাহিরে নিয়ে যেতে হবে।

পরিশেষে, আমাদের কেই এগিয়ে আসতে হবে ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে। সরকারের একার পক্ষে যানজট নিরসন সম্ভব নয়। সরকার প্রদত্ত আইন মেনে চললেই, এই ঢাকা শহরকে “যানজট মুক্ত” করা সম্ভব। ২০২১ সালের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে, উন্নত বিশ্বের মত আমাদেরকে “আইন ভঙ্গ “ করার প্রবনতার থেকে “আইন মান্য” করে চলার মনমানসিকতায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়া,যত আধুনিক আইন/মেট্রোরেল/এমআরটি/ফ্লাইওভার তৈরী করা হউক না কেন, আমরা যদি সরকারকে সহযোগিতা না করি, ঢাকা শহরকে “যানজট মুক্ত” করা সম্ভব না।

 

লেখক : উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দাউদকান্দি, কুমিল্লা (শ্রেষ্ঠ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিভাগ ও কুমিল্লা জেলা।)

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.